Tuesday, June 21, 2016

স্বয়ং নবী করিম (সা. ) যে দোয়া বেশি বেশি করতেন

http://bd-islamiclife.blogspot.com/উম্মত জননী হজরত জুওয়াইরিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে ছিলাম। তিনি চাশতের সময় আমার ঘরে ফিরে এলেন। তখনও আমি জায়নামাজে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জুওয়াইরিয়া! আমি যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই ওজিফা আদায়ে মশগুল ছিলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার পরে চারটি বাক্য তিনবার বলেছি। যদি এগুলোকে ওজন করা হয় তবে তোমার কৃত
সমস্ত ওজিফার চেয়ে এগুলোই বেশি ভারি হবে। আর তা হলো- .
.
ﺳُﺒْﺤَﺎ/ﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﻋَﺪَﺩَ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻭَﺭِﺿَﺎ ﻧَﻔْﺴِﻪِ ﻭَﺯِﻧَﺔَ ﻋَﺮْﺷِﻪِ .ﻭَﻣِﺪَﺍﺩَ ﻛَﻠِﻤَﺎﺗِﻪِ
.
.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া- রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি। -সহিহ মুসলিম শরিফ : ৭০৮৮ .
.
অর্থ: আমি আল্লাহতায়ালার প্রশংসাসমেত পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়া পরিমাণ, তার আরশের ওজন সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ।

সাহাবী গাছ [একটি ইসলামিক কাহিনী] পড়ুন জানুন


Sahabi Tree
http://bd-islamiclife.blogspot.com/
ছবিতে আপনারা যে গাছটি দেখতে পাচ্ছেন তা কোনো সাধারণ গাছ নয়।
আজ থেকে প্রায় ১৪৫৩ বছর আগের ঘটনা এটি।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বয়স যখন ১২ বছর ছিল তখন এই গাছটি তাঁকে আল্লাহ তা’আলার ইশারায় নিরাপদ আশ্রয় দান করেছিল।
আজও সেই গাছটি বেঁচে আছে।
@@@@ সুবাহানাল্লাহ@@@@ এই গাছটি “একমাত্র জীবিত
সাহাবী গাছ” হিসাবে পরিচিত!! গাছটি জর্ডানের এক মরুভূমী এলাকায় অবস্থিত।
আরেকটি অবাক করার মত
ব্যপার হল গাছটির শত বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এটি ছাড়া আর কোনো গাছ নেই। এই গাছটির নিচে কখনো কেউ বসতে পারেনি! তখন গাছটিতে কোন পাতা ছিলনা! নবী কারিম (সাঃ) ছেলে বেলায় উনার চাচার সাথে জর্ডানে যান এবং পথ
চলতে চলতে এই গাছটির নিচে বসেন।
বসার সাথে সাথে গাছটিতে পাতা বাহির হয়।
@@@@@সুবাহানাল্লাহ@@@@@ দূরে জারজিস ওরফে বুহাইরা নামের একজন খৃষ্টান পণ্ডিত থাকতেন তিনি নবীজির চাচার কাছে এসে বললেন আমি এতদিন এখানে আছি কেউ এই গাছের নিচে বসতে পারেনি এবং এই গাছের কোন পাতা ছিল না। খৃষ্টান পন্ডিত
জিজ্ঞেস করলেনঃ- এই ছেলেটির নাম কি ? চাচা বললেন, মোহাম্মদ! আবার জিজ্ঞস করলেনঃ- বাবার নাম কি ? আব্দুল্লাহ ! মাতার নাম ? আমিনা ! বালক মুহাম্মাদ (সা) কে দেখে, তার সাথে কথা বলে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকী রইলো না যে এই সে বহু প্রতিক্ষীত শেষ নবী, ইতিহাসের গতি পরিবর্তকারী, আরবসহ সমগ্র পৃথিবী থেকে পৌত্তলিকতার বিনাশকারী, একত্ববাদকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠাকারী। সাথে সাথে খৃষ্টান পন্ডিত বললেন আমি পড়েছি ইনি হলেন ইসলাম ধর্মের শেষ নবী।(হযরত মোহাম্মাদ সাঃ).

দেখে নিন সেহরী কিভাবে খাবেন

“স্বাস্থ্যকর সেহরী” প্রথমত, প্রত্যেক কে অবশ্যই সেহরি খাওয়া উচিত। ধর্মীয় গুরত্ব থাকার পাশাপাশি সেহরির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরত্ব ও অসীম। সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে দিন শেষে বুকজ্বলার সমস্যা বাড়বে, তাছাড়া দূর্বল ও বোধ করবেন অনেক বেশী। অনেকে বলেন যে এই সময় ক্ষিদে থাকেনা, তাই সেহরী খাইনা। ক্ষুদা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করুন ইফতারে ভাত খেতে (বিশ্বাস করুন, ভাজা পোড়া খাওয়ার চাইতে ইফতারে ভাত খেলে আপনি অনেক সুস্থ্য বোধ করবেন) এবং এরপর তারাবীর পরেhttp://bd-islamiclife.blogspot.com/ হালকা খাবার খেতে। তাহলে এমনিতেই আপনার সেহরীর সময় ক্ষিদে থাকবে। মূলত, রাতে ভারী ডিনার এর কারণেই সেহরীর সময় ক্ষুধা নষ্ট হয়।
>কতটুকু খাবেন? অনেকে ভাবেন যে, সেহরীতে বেশী করে খেয়ে নেই, তাহলে সারাদিন ক্ষিদে লাগবে না। কথাটা আসলে ভূল। আপনি যতই খান না কেন, ইফতারের আগ পর্যন্ত তা পেটে থাকবে না। এই অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আপনার পাকস্থলীর উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবে এবং সারাদিন আপনি বদহজম, পেট ফাপা, গ্যাস এর সমস্যায় ভুগবেন। আর এই রোজার মাস শেষে দেখবেন এই অতিরিক্ত
খাদ্য আপনার পেটে চর্বি হিসেবে জমা হয়েছে।
>কখন খাবেন? সেহরীতে ফজরের নামাজের বেশ আগে উঠুন (অন্তত ১ ঘন্টা), এমন ভাবে উঠুন যেন, খাবার খেয়ে একটু হাটা চলা করার সময় পান।
এরপর ফজরের নামাজ শেষে শুতে যান।
কেননা, খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পড়লে সারাদিন গন্ধ ঢেকুর এর সমস্যায় পরতে পারেন।
>কি খাবেন? সেহরীতে খাবেন শস্য জাতীয় খাবার (চাল, গম, ওট, ভুট্টা জাত খাবার যেমন ভাত, খিচুরী, রুটি ইত্যাদি) সঙ্গে আমিষ (ডাল,ডিম, মাছ, মাংস) এবং প্রচুর সব্জী। সব্জী একেতো শরীরের পানির চাহিদা পূরণ কোরে তৃষ্ণা কমায় পাশাপাশি কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। মূল খাদ্য ছাড়াও খেতে পারেন দুধ, বাদাম, মধু ও ফল (যেমন খেজুর, আম, তরমুজ, কলা, আঙ্গুর), তরমুজ শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে আর আম, কলা, আঙ্গুর শক্তিতে ভরপুর। বিশেষ করে যারা দিনে বেলায় রোজা রাখা অবস্থায় প্রায়ই হাইপো হয়ে যান বা চিনি স্বল্পতায় ভুগে দূর্বল বোধ করেন, তারা আঙ্গুরের রস খেতে পারেন। এতে থাকা বিশেষ ধরণের চিনি অনেক ক্ষন রক্তে থেকে হাইপো হওয়া রোধ করে। বাদামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো আমন্ড বা ওয়ালনাট। তাছাড়া চিনা বাদাম ও খেতে পারেন। মধু শুধু শুধু বা দুধে মিশিয়ে খেতে পারেন। (ডায়বেটিস রোগীর জন্য এগুলো প্রযোজ্য নয়) >কি খাবেন না? ১) সেহরীতে কখনোই সরাসরি প্রচুর চিনি যুক্ত ডেজার্ট খাবেন না (যেমন পায়েশ, মিষ্টি ইত্যাদি), চিনি রক্তে দ্রুত পৌছে আপনার ক্ষিদে কমিয়ে দিবে, ফলে আপনি সেহরীতে কম খাবেন। আবার ক্ষুব দ্রুত এটি রক্ত থেকে সরেও যাবে। ফলে এটি রক্তে অনেকক্ষন থেকে আপনার ক্ষিদে সারাদিন কমিয়ে রাখাতে কোন ভুমিকা তো রাখবেই না, বরং দ্রুত
মেটাবলাইজড হয়ে ফ্যাট এ পরিণত হবে।
সেহরীতে সবসময় এমন খাবার খাওয়া উচিত যা রক্তে অনেকক্ষন থাকে যেমন কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ( ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি)।
২) সেহরীতে চা, কফি খাওয়া উচিত না। কেননা এতে থাকা ক্যাফেইন মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়।
ফলে শরীর থেকে পানি ও মিনারেল বের হয়ে তৃষ্ণা বেড়ে যায়। যদি চা না খেলে খুব কষ্ট হয়। তাহলে পাতলা বা কম লিকারের চা সামান্য লেবুর রস দিয়ে খান।
৩) সেহরীতে অতি লবনযুক্ত খাবার (যেমন পনির, লবনযুক্ত শুটকী, আচার, সালাদ ড্রেসিং ইত্যাদি) একদম খাবেন না। শরীরে পানির পরিমাণ শরীরে লবনের পরিমানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। শরীরে লবন বেশী থাকলে পানির চাহিদা ও তৃষ্ণা বাড়ে। সুতরাং সেহরীতে লবনযুক্ত খাবার খেলে দিনের বেলায় আপনার তৃষ্ণা বেশী পাবে।
৪) সেহরীতে অতিরিক্ত পানি খেয়ে পেট ভরে ফেলার অর্থ হয়না। বেশী পানি আপনার সারাদিনের তৃষ্ণা মেটাতে পারবে না। সব পানি একেবারে সেহরীতে না খেয়ে ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত ভেঙ্গে ভেঙ্গে ৮ গ্লাস পানি খাওয়া বেশী স্বাস্থ্যকর। সেহরীতে ফল বা সব্জী খাওয়া পানির বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
>বিকল্প খাবারঃ অনেকে সেহরীতে ঘুম থেকে উঠে কিছুতেই ভাত খেতে পারেন না। যদিও সেহরীতে প্রচুর সব্জী ও ফল খেতে বলা হয়, কিন্তু শুধু এগুলো খেয়েও রোজ রাখা সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে ভাত না খেয়ে কয়েকটি শক্তিদায়ক খাবার অল্প অল্প করে খেতে পারেন। যারা ভাত খেতে পারেন না তারা রূটি যে কোন তরকারী দিয়ে। পিনাট বাটার ও প্রচন্ড শক্তি প্রদান কারী খাবার। টোস্ট দিয়ে পিনাট বাটার খেতে পারেন (পরিমিত
পরিমানে), আমাদের দেশে শুধু আলুর রেসিপি কম থাকলেও অনেক দেশেও আলু মূল খাদ্য।
আলুর তৈরী কোন ডিশ সেহরীতে ভাতের বিকল্প হতে পারে। দেশী রেসিপির মধ্যে হালিম ও শক্তিদায়ক খাবার। এতে আছে কার্বোহাইড্রেট ও আমিষ। বাসায় তৈরী কম তেলের এক হালিমও হতে পারে আপনার সেহরী।

ইসলামে বাবার মর্যাদা ! জেনে নিন


গতকাল রোববার ১৯/০৬/১৬ ছিল বিশ্ব বাবা দিবস। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। যে ব্যক্তি বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলো না হাদিসের ভাষায় তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত।
আবার যারা রমজান মাস পেল কিন্তু নিজেদেরকে গোনাহমুক্ত করতে পারলো না তারও ধ্বংসপ্রাপ্ত।
সুতরাং এ রমজানে বাবা-মার খেদমত
করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে রোজা ও বাবা-ময়ের হক উভয়টি আদায় করা সম্ভব। কুরআন- হাদিসের দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো- বাবা পরিবারের চালিকা শক্তির প্রধান। বাবা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ বন্ধুও উত্তম পথপ্রদর্শক। বাবা-মা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এ পরম সত্য কথা।
পৃথিবীতে সন্তানের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার কথা শুধুমাত্র বাবা-মা-ই ভেবে থাকেন। এ জন্যই পৃথিবীর সকল ধর্মেই বাবা-মাকে সর্বাধিক সম্মান দান করেছেন।
পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৫ জায়গায় বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার পালন কর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা- মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন; আবার বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ সে কারণেই ইসলাম বাবা-মার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করাকে বড় গোনাহের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বাবা-মার মর্যাদা কত বড় তার প্রমাণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের রয়েছে অনেক বড় একটি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি সংক্ষিপ্ত রূপ হলো- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরের প্রথম ধাপে ওঠে বললেন, আমিন; দ্বিতীয় ধাপে ওঠে বললেন, আমিন; তৃতীয় ধাপে ওঠে বললেন, আমিন।
সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবির আমিন বলার কারণ জানতে চাইলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ মাত্র জিব্রিল আলাইহিস সালাম আমাকে জানালেন, যে ব্যক্তি রমজান পেলে কিন্তু তার গোনাহ মাফ হয়নি, সে ধ্বংস হোক; আমি বললাম আমিন।
তারপর জিব্রিল বললো, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু সে দরূদ পড়লো না, আমি বললাম আমিন। তারপর জিব্রিল বললো, ‘সে ধ্বংস হোক, যে বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা একজনকে পেল কিন্তু তারা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করালো না। আমি বললাম আমিন।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বললেন, ‘বার্ধক্যে পিতা-মাতা দুর্বল হয়ে পড়ে; রোগে-শোকে অসহায় হয়ে পড়ে, সে অবস্থায় যে সন্তান পিতা-মাতর খেদমত তথা সেবা-যত্ন না করে তাদের জন্য এ ধ্বংস। যে ব্যাপারে বিশ্বনবি আমিন বলেছেন।
অথচ বিশ্বনবি ছিলেন উম্মতের জন্য রহমদিল। সব সময় উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণের আবেদন করতেন। অথচ পিতা-মাতার অবমূল্যয়ন করায় বিশ্বনবির তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে আমিন বলেছেন।(নাউজুবিল্লাহ) পরিশেষে… বাবা দিবসের সন্তানের জন্য বাবা- মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন হোক আমাদের অঙ্গীকার। বিশ্বনবির ছোট্ট একটি হাদিস দ্বারা শেষ করতে চাই- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো সন্তান বাবা-মার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকান; আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টি বিনিময়ে সন্তানের আমলনামায় আল্লাহ তাআলা একটি কবুল হজের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন।
এমনকি সাহাবায়েকেরামের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনবি বলেন, কেউ যদি একশত
বার তাকায়, তার বিনিময়ে একশত কবুল হজের সাওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে। (সুবহানাল্লাহ) সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ রমজান মাসে বাবা- মায়ের খেদমত করার পাশাপাশি তাঁদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি তাকিয়ে কবুল হজের সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। এবং মৃত বাবা- মায়ের জন্য দোয়া করার তাওফিক
দান করুন। আমিন।

পরকালের বিপদ- আপদ থেকে মুক্তির দোয়া

আজ ১৪ রমজান। মাগফিরাতের দশকে চতুর্থ দিন। এ দশকে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে গোনাহ থেকে ক্ষমা করবেন। বান্দাহ তাঁর মর্যাদার ওসিলায় বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত
থাকতে একটি দোয়া তুলে ধরা হলো- .

.
.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লা তুআখিজনি ফিহি বিলআ’ছারাতে; ওয়া আক্বিলনি ফিহি মিনাল খাত্বায়্যা ওয়া হাফাওয়াত; ওয়া লা তাঝআ’লনি ফিহি গারাদান লিলবালায়া ওয়াল আফাত; বিই’যযাতিকা ইয়া ই’যযাল মুসলিমিন।
.
.
.
অর্থ : হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আমার ভ্রান্তির জন্যে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। আমার দোষ- ত্রুটিকে হিসেবের মধ্যে ধরো না।
তোমার মর্যাদার ওসিলায় আমাকে বিপদ-আপদ ও দুর্যোগের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করো না। হে মুসলমানদের মর্যাদা দানকারী।
.
.
.
পরিশেষে… আল্লাহ তাআলা মাগফিরাতের দশকে মুমিন বান্দাকে দুনিয়ার সকল ভ্রান্তি থেকে হিফাজত করুন। পরকালের সকল আপদ-বিপদ থেকে হিফাজত থাকতে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Monday, June 20, 2016

তোমার বাপের কবর যদি কাবা ঘরের নীচে ঢুকিয়ে দেয়া হয় লাভ হবে না।

বক্তাঃ আব্দুর রাজ্জাক বিন-ইউসুফ


Thursday, June 16, 2016

রামাদ্বান কি?

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
রামাদ্বান/রমযান …এটি ‘আরাবী’ বার মাসগুলোর একটি, আর এটি দ্বীন ইসলামে একটি সম্মানিত মাস।  এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ও ফাযিলাহ (ফযীলত) সমূহের কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমনঃ
১. আল্লাহ -‘আযযা ওয়া জাল্ল- সাওমকে (রোযাকে) ইসলামের আরকানের মধ্যে চতুর্থ রুকন হিসেবে স্থান দিয়েছেন, যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
“রামাদ্বান মাস যে মাসে তিনি আল কুরআন নাযিল  করেছেন, তা মানবজাতির জন্য হিদায়াতের উস, হিদায়াত ওসত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শনসুতরাংতোমাদের মাঝে যে এইমাসপায়সেযেনসাওম রাখে“ [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৫]
আর  সাহীহুল বুখারী ইমান অধ্যায়  ও  সাহীহ মুসলিম এ ইবনু উমার এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে নাবী (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপরপ্রতিষ্ঠিতএই সাক্ষ্য দেওয়াযে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই,এবংমুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলসালাতকায়েম(প্রতিষ্ঠা) করাযাকাত প্রদান করা, রমযানমাসে সাওম পালন করাএবংবাইতুল্লাহ (কাবাহ)এরউদ্দেশ্যে হজ্জ করা”।
২. আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্ল এই মাসে আল কুরআন  নাযিল করেছেন, যেমনটি তিনি-তা‘আলা-পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করেছেনঃ
“রামাদ্বান মাস যে মাসে তিনি আল কুরআননাযিল করেছেনতা মানবজাতিরজন্য হিদায়াতের,হিদায়াত ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শনসুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই মাস পায় সে যেন সাওম রাখে”। [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৫]
তিনি –সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা- আরো বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই আমি একে (আল কুরআন) লাইলাতুল ক্বাদরেনাযিল করেছি”। [সূরা ক্বাদরঃ১]
৩. আল্লাহ এ মাসে লাইলাতুল ক্বাদর রেখেছেন যে মাস হাজার মাস থেকে উত্তম যেমনটি তিনি-তা’আলা বলেছেনঃ
“নিশ্চয়ই আমি একেলাইলাতুল ক্বাদরে (আল কুরআননাযিল করেছি। এবং আপনিকিজানেনলাইলাতুলক্বাদর কি? লাইলাতুলক্বাদর হাজারমাস অপেক্ষা অধিকউত্তম। এতে ফেরেশতাগণ এবং রূহ(জিবরাইআলাইহিস সালাম) তাদের রবের(প্রতিপালকের) অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন সকলসিদ্ধান্তনিয়ে। শান্তিময় (বানিরাপত্তাপূর্ণ ) সেই রাতফাজরের সূচনা পর্যন্ত”। [সূরা ক্বাদরঃ১-৫]
তিনি আরো বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই আমি একে (আল কুরআন) এক বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সর্তককারী”। [সূরা আদ দুখানঃ৩]
আল্লাহ তা’আলা রমযান মাসকে লাইলাতুল ক্বাদর  দিয়ে সম্মানিত করেছেন আর এই বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) রাতে মর্যাদার বর্ণনায় সূরাতুল ক্বাদর নাযিল করেছেন।
আর এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে অনেক আহাদীস (হাদীসসমূহ, হাদীসের বহুবচন)। আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেনঃ
তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েহে রামাদ্বান, এক বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) মাস। এ মাসে স্বাওম পালন করা আল্লাহ-‘আযযা ওয়া জাল্ল-তোমাদের উপর ফারদ্ব (ফরজ) করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে জাহীমের দরজাসসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে অবাধ্য শাইত্বানদের শেকলবদ্ধ করা হয় আর এ মাসে রয়েছে আল্লাহর এক রাত যা হাজার মাস থেকে উত্তম, যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত হল [বর্ণনা করেছেন আন-নাসা’ঈ (২১০৬), আহমাদ (৮৭৬৯) এবং আল-আলবানী একে সাহীহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ‘সাহীহুত তারঘীব’ (৯৯৯) – এ]
আর আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- থেকে বর্ণিত  যে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ
“যে ঈমান সহকারে প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্বাদর (ক্বাদরের রাত্রিতে) ‘ইবাদাত  করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।” [বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৯০১) ও মুসলিম (৭৬০)]
৪. আল্লাহ -‘আযযা ওয়া জাল্ল – এই মাসে স্বাওম পালন ও ক্বিয়াম করাকে গুনাহ মাফের কারণ করেছেন, যেমনটি দুই সাহীহ গ্রন্থ বুখারী (২০১৪) ও মুসলিম (৭৬০) – এ বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ-এর হাদীস থেকে যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ
“যে রামাদ্বান মাসে ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের আশায় স্বাওম পালন করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।”
এবং বুখারী (২০০৮) ও মুসলিম (১৭৪)-এ তাঁর (আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ-) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেনঃ
“যে রামাদ্বান মাসে ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের আশায় ক্বিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।”
মুসলিমদের মাঝে রামাদ্বানের রাতে ক্বিয়াম করা সুন্নাহ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ (ঐক্যমত) রয়েছে। ইমাম আন-নাওয়াউয়ী উল্লেখ করেছেনঃ
রামাদ্বানে  ক্বিয়াম করার অর্থ হল তারাউয়ীহের (তারাবীহের) স্বালাত আদায় করা অর্থাৎ তারাউয়ীহের (তারাবীহের) স্বালাত আদায়ের মাধ্যমে যাতে ক্বিয়াম করার উদ্দেশ্য সাধিত হয়।
৫. আল্লাহ-‘আযযা ওয়া জাল্ল- এই মাসে জান্নাতসমূহের দরজা সমূহ খুলে দেন, এ মাসে জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন এবং শাইত্বানদের শেকলবদ্ধ করেন।
৬. এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে (তাঁর বান্দাদের) মুক্ত করেন। ইমাম আহমাদ (৫/২৫৬) আবূ উমামাহ’র হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ
“আল্লাহর রয়েছে প্রতি ফিত্বরে (ইফত্বারের সময় জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দা
আল-মুনযিরী বলেছেন এর ইসনাদে কোন সমস্যা নেই। আর আল-আলবানী এটিকে ‘সাহীহুত তারঘীব’ (৯৮৭) – এ সাহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল-বাযযার (কাশফ ৯৬২) আবূ সা‘ঈদের হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ – তাবারাকা ওয়া তা‘আলা – র রয়েছে (রামাদ্বান মাসে) প্রতি দিনে ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দাগণ আর নিশ্চয়ই একজন মুসলিমের রয়েছে প্রতি দিনে ও রাতে কবুল হওয়া দু‘আ’
৭. রামাদ্বান মাসে স্বাওম পালন করা পূর্ববর্তী রামাদ্বান থেকে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ লাভের কারণ যদি বড় গুনাহ সমূহ (কাবীরাহ গুনাহ সমূহ) থেকে বিরত থাকা হয়, যেমনটি প্রমাণিত হয়েছে ‘সাহীহ মুসলিম (২৩৩)-এ যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ
“পাঁচ ওয়াক্বতের পাঁচবার স্বালাত, এক  জুমু‘আহ থেকে অপর  জুমু‘আহ, এক রামাদ্বান থেকে অপর রামাদ্বান এর মাঝে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ  করে যদি বড় গুনাহ সমূহ (কাবীরাহ গুনাহ সমূহ) থেকে বিরত থাকা হয়
৮. এই মাসে স্বাওম পালন করা দশ মাসে স্বিয়াম পালন করার সমতূল্য যা ‘সাহীহ মুসলিম’ (১১৬৪)-এ প্রমাণিত আবূ আইয়ূব আল-আনসারীর হাদীস থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায় যে তিনি বলেছেনঃ
“যে রামাদ্বান মাসে স্বিয়াম পালন করল, এর পর শাউওয়ালের ছয়দিন স্বাওম পালন করল, তবে তা সারা জীবন স্বাওম রাখার সমতূল্য”
আর ইমাম আহমাদ (২১৭/০৬)বর্ণনা করেছেন যে, নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ
“যে রামাদ্বান মাসে স্বাওম পালন করল, তা দশ মাসের (স্বাওম পালনের) সমতূল্য আর ‘ঈদুল ফিত্বরের পর (শাউওয়ালের মাসের) ছয় দিন স্বাওম পালন করা গোটা বছরের (স্বাওম পালনের) সমতূল্য।”
[বিঃদ্রঃ সূরা (৬) আল-আন‘আমের ১৬০ নং আয়াত অনুসারে কোন মু’মিন কোন ভাল কাজ করলে আল্লাহ-তা‘আলা-তাকে দশ গুণ সাওয়াব দেন। সুবহানাল্লাহ ! তাই রামাদ্বান মাসে ৩০ দিন স্বাওম পালনের অর্থ এই দাঁড়ায় (৩০×১০)=৩০০ দিন অর্থাৎ   দশ মাস স্বিয়াম পালন করা; আর (শাউওয়ালের মাসের) ছয় দিন স্বাওম পালন করার অর্থ দাঁড়ায় (৬×১০)=৬০ দিন অর্থাৎ  দুই মাস স্বিয়াম পালন করা। সুতরাং রামাদ্বান ও এর পরবর্তী শাউওয়ালের ছয় দিন স্বাওম পালন করা (১০ মাস+২ মাস) = ১২ মাস অর্থাৎ  গোটা বছরের সমতূল্য!]
“আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযক্ব দান করেন” [সূরা আন-নূরঃ ৩৮]
৯. এই মাসে যে ইমামের সাথে তিনি (ইমাম)(স্বালাত) শেষ করে চলে যাওয়া পর্যন্ত ক্বিয়াম করে, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে হিসাব করা হবে যা ইমাম আবূ দাঊদ (১৩৭০) ও অন্য সূত্রে আবূ যার -রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ
“যে ইমাম চলে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর (ইমামের) সাথে ক্বিয়াম করল, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে ধরে নেয়া হবে।”
আল-আলবানী ‘স্বালাহ আত-তারাউয়ীহ’ বইতে (পৃঃ১৫) একে সাহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন।
১০. এই মাসে ‘উমরাহ করা হাজ্জ করার সমতূল্য। ইমাম আল-বুখারী (১৭৮২) ও মুসলিম (১২৫৬) ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন  যে তিনি বলেছেনঃ
রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- আনসারদের এক মহিলাকে প্রশ্ন করলেনঃ
“কিসে আপনাকে আমাদের সাথে হাজ্জ করতে বাঁধা দিল?”
তিনি (আনসারী মহিলা)বললেনঃ
“আমাদের শুধু পানি বহনকারী দুটি উটই ছিল।”
তাঁর স্বামী ও পুত্র একটি পানি বহনকারী উটে করে হাজ্জে গিয়েছিলেন।
তিনি বললেনঃ
“আর আমাদের পানি বহনের জন্য  একটি পানি বহনকারী উট রেখে গেছেন।”
তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেনঃ
“তাহলে রামাদ্বান এলে  আপনি ‘উমরাহ করেন কারণ, এ মাসে ‘উমরাহ করা হাজ্জ করার সমতূল্য।”
মুসলিমের রিওয়াইয়াতে আছেঃ
“……কারণ এ মাসে ‘উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ করার সমতূল্য।”
১১. এ মাসে ই‘তিকাফ করা সুন্নাহ কারণ নাবীসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তা নিয়মিতভাবে করতেন যেমনটি বর্ণিত হয়েছে ‘আ’ইশাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু‘আনহা-থেকে –
ল্লাহ তাঁকে (রাসূলুল্লাহকে) ক্বাবদ্ব (কবজ, মৃত্যু দান) না দেওয়া পর্যন্ত রামাদ্বানের শেষ দশ দিনে ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ই‘তিকাফ করেছেন।”
[বর্ণনা করেছেন আল বুখারী (১৯২২) ও মুসলিম (১১৭২)]
১২. রামাদ্বান মাসে ক্বুর’আন অধ্যয়ন ও তা বেশি বেশি তিলাওয়াত করা খুবই তা’কীদের (তাগিদের)  সাথে করণীয় এক মুস্তাহাব্ব (পছন্দনীয়) কাজ। আর ক্বুর’আন অধ্যয়ন হল একজন অপরজনকে ক্বুর’আন পড়ে শুনাবে এবং অপরজনও তাকে তা পড়ে শুনাবে। আর তা মুস্তাহাব্ব  হওয়ার দালীলঃ
“যে জিবরীল রামাদ্বান মাসে প্রতি রাতে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং ক্বুরআন অধ্যয়ন করতেন।”
[বর্ণনা করেছেন আল বুখারী (৬) ও মুসলিম (২৩০৮)]
কুরআন ক্বিরা‘আত সাধারণভাবে মুস্তাহাব্ব, তবে রামাদ্বানে বেশি তা’কীদ যোগ্য।
১৩. রামাদ্বানে স্বাওম পালনকারীকে ইফত্বার করানো মুস্তাহাব্ব যার দালীল যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী হতে বর্ণিত হাদীস যাতে তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ
“যে কোন স্বাইমকে (স্বাওম পালনকারীকে) ইফত্বার করায়, তার (যে ইফত্বার করালো) তাঁর (স্বাওম পালনকারীর) সমান সাওয়াব হবে, অথচ সেই স্বাওম পালনকারীর সাওয়াব কোন অংশে কমে না”
[বর্ণনা করেছেন আত-তিরমিযী(৮০৭), ইবনু মাজাহ (১৭৪৬) এবং আল আলবানী ‘সাহীহ আত তিরমিযী’(৬৪৭) তে একে সাহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন ]
দেখুন প্রশ্ন নং (12598)
এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

রমজান মাসের ৩০ আমল


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين محمد وآله وأصحابه أجمعين أما بعد

রমাদান মাস আল্লাহ তা‘আলা এক বিশেষ নিয়ামাত। সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমাত, বরকত ও নাজাতের মাস-রমাদান মাস।
আলকুরআনে এসেছে,

﴿ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]
রমাদান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ»

‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)’’ [সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩]
এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:
এক. ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে। আল-কুরআনে এসেছে,

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ ﴾ [البينة: ٥]

“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]
দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন।
কুরআনে এসেছে,

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ».

‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-

[১] সিয়াম পালন করাঃ

ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]
সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ »

‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

«مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُوْمُ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا»

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

[২] সময় মত সালাত আদায় করা

সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ ﴾ [النساء: ١٠٣]

‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]
 এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

«عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَقْرَبُ إِلَى الْجَنَّةِ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى مَوَاقِيتِهَا»

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]

[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা

রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [العلق: ١]

‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

« تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ ، وَاتْلُوهُ»

‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

 [৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো

রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»

‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]

«مَنْ عَلَّمَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، كَانَ لَهُ ثَوَابُهَا مَا تُلِيَتْ»

‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে’ [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]

[৫] সাহরী খাওয়া

সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে,

«السُّحُورُ أَكْلَةٌ بَرَكَةٌ فَلاَ تَدَعُوهُ ، وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جَرْعَةً مِنْ مَاءٍ ، فَإِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ»

‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]

[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া

সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে,

« مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]
 তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে,

«إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَة»ٍ

‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে’’ [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ]।
তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লিংক গুলো দেখতে পারেনঃ 
  1. http://islamqa.info/bn/9036
  2. http://islamqa.info/en/82152
  3. http://islamqa.info/en/38021

[৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা

এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا ، لاَ أَقُولُ الْم حَرْفٌ ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ»

‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]।
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وَلاَ أَعْلَمُ نَبِىَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِى لَيْلَةٍ وَلاَ صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلاَ صَامَ شَهْرًا كَامِلاً غَيْرَ رَمَضَانَ».

‘‘রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩]।

 [৮] শুকরিয়া আদায় করা

রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’[সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]

﴿وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم: ٧]

‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ [সূরা ইবরাহীম : ৭]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন

« الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ »

অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য [সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮]

[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা

এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« وَيُنَادِى مُنَادٍ يَا بَاغِىَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِىَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ »

‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]

 [১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া

রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ »

‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]

[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা

এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

«كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ»

‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা

রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَسْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّى امْرُؤٌ صَائِمٌ»

‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশস্নীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোযাদার’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৫১]

[১৩] ই‘তিকাফ করা

ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

« كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا».

‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]। দশ দিন ই‘তেকাফ করা সুন্নাত।

[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা

রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা :

﴿ وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلٗا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٣٣ ﴾ [فصلت: ٣٣]

‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]
 হাদীসে এসেছে,

«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »

‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]

 [১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা

এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«قَالَ فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً مَعِي».

‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা

রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা,

﴿ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ ﴾ [القدر: ٣]

‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]
 হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]
 এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ».

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]
 লাইলাতুল কদরের দো‘আঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বলবেঃ

«اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى»

‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩]

 [১৭] বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা

দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে,

«إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ»

‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
 অন্য হাদীসে এসেছে,

«إِنَّ للهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عُتَقَاء فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَإِنَّهُ لِكُلِّ مُسْلِمٍ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ دَعْوَة مُسْتَجَابَة»

‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দো‘আ কবূল করা হয়’’ [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২]

 [১৮] ইফতার করা

সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে,

« إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلْيُفْطِرْ عَلَى التَّمْرِ فَإِنْ لَمْ يَجِدِ التَّمْرَ فَعَلَى الْمَاءِ فَإِنَّ الْمَاءَ طَهُورٌ »

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন :

« ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ».

“পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]
 অপর বর্ণনায় যে এসেছে

«اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ »

“হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।” [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮] এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা।

 [১৯] ইফতার করানো

অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে,

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْء. »

‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]

 [২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা

তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ﴾ [التحريم: ٨]

‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ [সূরা আত-তাহরীম : ৮]
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّى أَتُوبُ فِى الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ».

‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’ [সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]
 তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে,

«اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ»

‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’
ফযিলাত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬]

 [২১] তাকওয়া অর্জন করা

তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣]

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]

﴿ۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ ﴾ [الطلاق: ٢]

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। [সূরা তালাক : ০২]

 [২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা

ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ»

যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]

 [২৩] ফিতরাহ দেয়া

এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]

 [২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো

রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে,

﴿ وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ ﴾ [الانسان: ٨]

অর্থ: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]
 এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে,

«عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ:«تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ ، وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ».

‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]
 অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,

«أَيُّمَا مُؤْمِنٍ أَطْعَمَ مُؤْمِنًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللهُ مِنْ ثِمَارِ الْجَنَّةِ»

‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]

 [২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা

আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [النساء: ١]

‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]
 আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«بُلُّوا أَرْحَامَكُمْ وَلَوْ بِالسَّلَامِ»

“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩]

 [২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা

কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে,

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ -[সূরা আল-হিজর: ৯]
 যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا ».

‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে” -[সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]

 [২৭] আল্লাহর যিকর করা

এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবীহ পাঠ করা। সময় পেলেই

سبحان الله ، الحمدلله ، لا إله إلا الله ، الله أكبر পড়া।

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى مِنَ الْكَلاَمِ أَرْبَعًا : سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ ، فَمَنْ قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ ، كُتِبَ لَهُ عِشْرُونَ حَسَنَةً ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عِشْرُونَ سَيِّئَةً ، وَمَنْ قَالَ : اللَّهُ أَكْبَرُ فَمِثْلُ ذَلِكَ ، وَمَنْ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ فَمِثْلُ ذَلِكَ ، وَمَنْ قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ كُتِبَ لَهُ ثَلاَثُونَ حَسَنَةً وَحُطَّتْ عَنْهُ ثَلاَثُونَ سَيِّئَةً»

অর্থ: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো سبحان الله ، الحمدلله ، لا إله إلا الله ، الله أكبرযে ব্যক্তি سبحان الله পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি الله أكبرপড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি لا إله إلا الله পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَপড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

[২৮] মিসওয়াক করা

মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে,

«السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ»

অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।

 [২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো

রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْقُرْآنَ »

জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]
ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা

কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,

﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣ ﴾ [الاعراف: ٣]

‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’ -[সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]
 কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كُنَّا نَتَعَلَّمُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ آيَاتٍ فَمَا نَعْلَمُ الْعَشْرَ الَّتِي بَعْدَهُنَّ حَتَّى نَتَعَلَّمَ مَا أُنْزِلَ فِي هَذِهِ الْعَشْرِ مِنَ الْعَمَلِ»

‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ [শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]

যা করণীয় নয়

রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
1. বিলম্বে ইফতার করা
2. সাহরী না খাওয়া
3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা
4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
5. অপচয় ও অপব্যয় করা
6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
7. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
8. বেশি বেশি খাওয়া
9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা
10. বেশি বেশি ঘুমানো
11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা
13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
14. বিদ‘আত করা
15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা

প্রিয় পাঠক!

রমাদান মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমাদান পাওয়া সার্থক হবে।
কেননা হাদীসে এসেছে,

«وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَتَى عَلَيْهِ شَهْرُ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ ، وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ»

‘‘যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক’’ [শারহুস সুন্নাহ : ৬৮৯]।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফীক দিন। আমীন!

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه أجمعين – وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Powered by Blogger.