Tuesday, June 21, 2016

ইসলামে বাবার মর্যাদা ! জেনে নিন


গতকাল রোববার ১৯/০৬/১৬ ছিল বিশ্ব বাবা দিবস। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। যে ব্যক্তি বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলো না হাদিসের ভাষায় তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত।
আবার যারা রমজান মাস পেল কিন্তু নিজেদেরকে গোনাহমুক্ত করতে পারলো না তারও ধ্বংসপ্রাপ্ত।
সুতরাং এ রমজানে বাবা-মার খেদমত
করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে রোজা ও বাবা-ময়ের হক উভয়টি আদায় করা সম্ভব। কুরআন- হাদিসের দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো- বাবা পরিবারের চালিকা শক্তির প্রধান। বাবা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ বন্ধুও উত্তম পথপ্রদর্শক। বাবা-মা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এ পরম সত্য কথা।
পৃথিবীতে সন্তানের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার কথা শুধুমাত্র বাবা-মা-ই ভেবে থাকেন। এ জন্যই পৃথিবীর সকল ধর্মেই বাবা-মাকে সর্বাধিক সম্মান দান করেছেন।
পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৫ জায়গায় বাবা-মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার পালন কর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কর না এবং বাবা- মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন; তবে তাঁদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে বল শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন; আবার বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ সে কারণেই ইসলাম বাবা-মার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করাকে বড় গোনাহের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বাবা-মার মর্যাদা কত বড় তার প্রমাণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের রয়েছে অনেক বড় একটি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি সংক্ষিপ্ত রূপ হলো- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরের প্রথম ধাপে ওঠে বললেন, আমিন; দ্বিতীয় ধাপে ওঠে বললেন, আমিন; তৃতীয় ধাপে ওঠে বললেন, আমিন।
সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবির আমিন বলার কারণ জানতে চাইলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ মাত্র জিব্রিল আলাইহিস সালাম আমাকে জানালেন, যে ব্যক্তি রমজান পেলে কিন্তু তার গোনাহ মাফ হয়নি, সে ধ্বংস হোক; আমি বললাম আমিন।
তারপর জিব্রিল বললো, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলো কিন্তু সে দরূদ পড়লো না, আমি বললাম আমিন। তারপর জিব্রিল বললো, ‘সে ধ্বংস হোক, যে বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা একজনকে পেল কিন্তু তারা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করালো না। আমি বললাম আমিন।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বললেন, ‘বার্ধক্যে পিতা-মাতা দুর্বল হয়ে পড়ে; রোগে-শোকে অসহায় হয়ে পড়ে, সে অবস্থায় যে সন্তান পিতা-মাতর খেদমত তথা সেবা-যত্ন না করে তাদের জন্য এ ধ্বংস। যে ব্যাপারে বিশ্বনবি আমিন বলেছেন।
অথচ বিশ্বনবি ছিলেন উম্মতের জন্য রহমদিল। সব সময় উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণের আবেদন করতেন। অথচ পিতা-মাতার অবমূল্যয়ন করায় বিশ্বনবির তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে আমিন বলেছেন।(নাউজুবিল্লাহ) পরিশেষে… বাবা দিবসের সন্তানের জন্য বাবা- মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন হোক আমাদের অঙ্গীকার। বিশ্বনবির ছোট্ট একটি হাদিস দ্বারা শেষ করতে চাই- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো সন্তান বাবা-মার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকান; আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টি বিনিময়ে সন্তানের আমলনামায় আল্লাহ তাআলা একটি কবুল হজের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন।
এমনকি সাহাবায়েকেরামের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনবি বলেন, কেউ যদি একশত
বার তাকায়, তার বিনিময়ে একশত কবুল হজের সাওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে। (সুবহানাল্লাহ) সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ রমজান মাসে বাবা- মায়ের খেদমত করার পাশাপাশি তাঁদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি তাকিয়ে কবুল হজের সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। এবং মৃত বাবা- মায়ের জন্য দোয়া করার তাওফিক
দান করুন। আমিন।

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Powered by Blogger.