Tuesday, June 7, 2016

জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী যারা

জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী যারা
মোস্তাফা হাবিব আহসান

বেহেশতের মাঝে সবচেয়ে উত্তম বেহেশত হলো জান্নাতুল ফেরদাউস। জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হতে হলে একজন মুমিনকে কি কি গুণের অধিকারী হতে হবে তা পবিত্র  কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে (সেসব) ঈমানদার মানুষেরা মুক্তি পেয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে একান্ত বিনয়াবনত হয়, যারা অর্থহীন বিষয় থেকে বিমুখ থাকে, যারা (রীতিমতো) জাকাত প্রদান করে, যারা তাদের যৌন অঙ্গসমূহের হেফাজত করে, নিজেদের বৈধ স্বামী-স্ত্রী ছাড়া যদি কেউ অন্য কোনো পন্থায় যৌন কামনা চরিতার্থ করতে চায়, তাহলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী বলে বিবেচিত হবে। যারা তাদের কাছে রক্ষিত আমানত ও অন্যদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিসমূহের  হেফাজত করে, যারা নিজেদের নামাজসমূহের ব্যাপারে সমধিক যত্নবান হয়। এ লোকগুলোই হচ্ছে মূলতঃ জমিনে আমার যথার্থ উত্তরাধিকারী, জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারও এরা পাবে, এরা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ -সুরা আল মুমিনুন : ১-১১

অন্যত্র আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যারা আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং  সে অনুযায়ী নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারির  জন্যে জান্নাতুল ফেরদাউস সাজানো রয়েছে।  সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, সেখান  থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবে না।’ -সূরা কাহাফ: ১০৭-১০৮

জান্নাতিরা জান্নাতে মিলে মিশে থাকবেন
জান্নাতের মধ্যে কোনো প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ বা দলাদলি থাকবে না। জান্নাতি  লোকেরা সেখানে পরস্পর ভাই ভাই হিসেবে বসবাস করবেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘যারা আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে তারা সেদিন অবশ্যই জান্নাত ও ঝর্ণাধারায় বহুমুখী নিয়ামতে অবস্থান করবে। এই বলে তাদের অভিবাদন জানানো হবে তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে এখানে প্রবেশ করো। তাদের অন্তরে ঈর্ষা-বিদ্বেষ যাই থাক আমি সেদিন তা দূর করে দেবো, তারা একে অপরের আপন হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি সেখানে অবস্থান করবে।  সেখানে তাদের কোনো রকম অবসাদ স্পর্শ করতে পারবে না, আর তাদের  সেখান থেকে কোনো দিন বেরও করে  দেওয়া হবে না।’ -সুরা আল হিজর: ৪৫-৪৮

জান্নাতিদের মেহমানদারি
জান্নাতের মেহমানদারি কেমন হবে তা দুনিয়ার ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সেখানে সুখের  কোনো সীমা-পরিসীমা থাকবে না। জান্নাতি লোকেরা যখন যা চাইবে তখন তাই প্রদান করা হবে। মনে যা আকাক্সক্ষা করবে তাই তাদের সামনে এসে হাজির হবে। জান্নাতি লোকদের  মেহমানদারির কিছু বর্ণনা পবিত্র কোরআন শরিফে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জান্নাতি লোকেরা থাকবে স্বর্ণখচিত আসনের ওপর, তার ওপর তারা একে অপরের মুখোমুখি আসনে হেলান দিয়ে বসবে। তাদের চারপাশে তাদের সেবার জন্য চির কিশোরদের একটি দল ঘুরতে থাকবে, পানপাত্র ও সুরাভর্তি পেয়ালা নিয়ে এরা প্রস্তুত থাকবে, সেই সুরা পান করার কারণে তাদের কোনো শিরঃপীড়া হবে না, তারা কোনো রকম নেশাগ্রস্তও হবে না, সেখানে আরও থাকবে তাদের নিজ নিজ পছন্দমতো ফলমূল, থাকবে তাদের মনের চাহিদা মোতাবেক রকমারী পাখির মাংস; সেবার জন্যে মজুদ থাকবে সুন্দর চক্ষুধারী হুরগণ, তারা হবে সুন্দর-সুশ্রী, লুকিয়ে রাখা মুক্তার মতো। এর সব কিছুই হচ্ছে তাদের সেসব কাজের পুরস্কার, যা তারা দুনিয়াতে করে এসেছে। আর সেখানে থাকবে প্রবহমান ঝর্ণাধারার পানি, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল, এমন সব ফল যার সরবরাহ কখনো শেষ হবে না এবং যার ব্যবহার কখনো নিষিদ্ধ করা হবে না, আর থাকবে উঁচু উঁচু বিছানা; আমি তাদের সাথী হুরদের বানিয়েছি বানানোর মতো করেই, তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমি তাদের চিরকুমারী করে রেখেছি, তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা হবে সমবয়সের প্রেম সোহাগিনী, -সুরা ওয়াকিয়া: ১৫-৩৮

জাহান্নামের চিত্র
জান্নাতি লোকেরা বেহেশতে পাবে অতীব আরামদায়ক ও পরম সুখের আতিথেয়তা। অপরপক্ষে জাহান্নামিরা  সেখানে পাবে অতিকষ্টদায়ক ও অত্যন্ত পীড়াদায়ক আতিথেয়তা। পবিত্র  কোরআনে জাহান্নামি লোকদের আতিথেয়তার কিছু নমুনা দেওয়া হয়েছে, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, অবশ্যই আগের ও পরের সব লোককেই একটি নির্দিষ্ট দিনে একটা নির্দিষ্ট সময়ে জড়ো করা হবে। অতঃপর কাফেরদেরকে বলা হবে ওহে পথভ্রষ্ট, ও এ দিনের আগমন মিথ্যা প্রতিপন্নকারী ব্যক্তিরা, দুনিয়ায় যা অর্জন করেছ তার বিনিময়ে আজ তোমরা ভক্ষণ করবে ঝাক্কুম নামক একটি গাছের অংশ, অতঃপর তা দিয়েই  তোমরা তোমাদের পেট ভর্তি করবে, তার ওপর তোমরা পান করবে জাহান্নামের ফুটন্ত পানি, তাও আবার পান করতে থাকবে মরুভূমির তৃষ্ণার্ত উটের মতো করে, এ হবে কিয়ামতে তাদের যথার্থ ‘মেহমানদারি।’ -সুরা ওয়াকিয়া: ৪৯-৫৬।

কোরআন মজিদের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তার একটু  পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম, (সেখানে) গলিত পুঁজ জাতীয় পানি পান করানো হবে, সে অতি কষ্টে তা গলাধঃকরণ করতে চাইবে, কিন্তু গলাধঃকরণ করা তার পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব হবে না, (উপরন্তু) চারদিক থেকেই তার মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে কোনো মতেই মরবে না, বরং তার পেছনে থাকবে (আরও) কঠোর আজাব।’ -সুরা ইবরাহিম: ১৬-১৭

পবিত্র কোরআনে একথাগুলো এভাবে বলা হয়েছে, ‘সেদিন ভয়াবহ শাস্তি দেখে হতভাগ্য লোকেরা দুনিয়ায় যাদের তারা মেনে চলতো, তাদের অনুসারীদের সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলবে, আমরাতো এদের চিনিই না, এদের সাথে তাদের সব সম্পর্ক সেদিন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা সেদিন বলবে, আবার যদি একবার আমাদের জন্যে পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকতো, তাহলে আজ যেমনি করে তারা আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আমরা সেখানে গিয়ে তাদের সাথে যাবতীয় সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতাম, এভাবেই আল্লাহতায়ালা তাদের কর্মকাণ্ডগুলো তাদের ওপর একরাশ লজ্জা ও আক্ষেপ হিসেবে  দেখাবেন; এরা কখনো সেই জাহান্নাম  থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।’ -সুরা বাকারা: ১৬৬-১৬৭

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Blog Archive

Powered by Blogger.